সূরা আল মায়েদা

দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহ্‌র নামে,

নিচের ▶ বাটনে ক্লিক করুন

সূরা আল মায়েদা

৫-১ : হে মু’মিনগণ ! তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ করিবে। যাহা তোমাদের নিকট বর্ণিত হইতেছে তাহা ব্যতীত চতুষ্পদ আন‘আম তোমাদের জন্য হালাল করা হইল, তবে ইহ্‌রাম অবস্থায় শিকার করাকে বৈধ মনে করিবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ যাহা ইচ্ছা আদেশ করেন।

সূরা আল মায়েদা

৫-২ : হে মু’মিনগণ ! আল্লাহ্‌র নিদর্শনের, পবিত্র মাসের, কুরবানীর জন্য কা‘বায় প্রেরিত পশুর, গলায় পরান চিহ্নবিশিষ্ট পশুর এবং নিজ প্রতিপালকের অনুগ্রহ ও সন্তোষ লাভের আশায় পবিত্র গৃহ অভিমুখে যাত্রীদের পবিত্রতার অবমাননা করিবে না। যখন তোমরা ইহ্‌রামমুক্ত হইবে তখন শিকার করিতে পার। তোমাদেরকে মসজিদুল হারামে প্রবেশে বাধা দেওয়ার কারণে কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদেরকে যেন কখনই সীমালংঘনে প্ররোচিত না করে। সৎকর্ম ও তাক্ওয়ায় তোমরা পরস্পর সহযোগিতা করিবে এবং পাপ ও সীমালংঘনে একে অন্যের সহযোগিতা করিবে না। আল্লাহ্‌কে ভয় করিবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ শাস্তিদানে কঠোর।

সূরা আল মায়েদা

৫-৩ : তোমাদের জন্য হারাম করা হইয়াছে মৃত জন্তু, রক্ত, শূকর - মাংস, আল্লাহ্‌ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত জন্তু, পতনে মৃত জন্তু, শৃংগাঘাতে মৃত জন্তু এবং হিংস্র পশুতে খাওয়া জন্তু; তবে যাহা তোমরা যবেহ্ করিতে পারিয়াছ তাহা ব্যতীত, আর যাহা মূর্তি পূজার বেদীর উপর বলি দেওয়া হয় তাহা এবং জুয়ার তীর দ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করা - এই সব পাপকাজ। আজ কাফিররা তোমাদের দীনের বিরুদ্ধাচরণে হতাশ হইয়াছে; সুতরাং তাহাদেরকে ভয় করিও না, শুধু আমাকে ভয় কর। আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাংগ করিলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন মনোনীত করিলাম। তবে কেহ পাপের দিকে না ঝুঁকিয়া ক্ষুধার তাড়নায় বাধ্য হইলে তখন আল্লাহ্ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

সূরা আল মায়েদা

৫-৪ : লোকে তোমাকে প্রশ্ন করে, তাহাদের জন্য কী কী হালাল করা হইয়াছে ? বল, ‘সমস্ত ভাল আল জিনিস তোমাদের জন্য হালাল করা হইয়াছে এবং শিকারী পশু - পাখি যাহাদেরকে তোমরা শিকার শিক্ষা দিয়াছ যেভাবে আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়াছেন, উহারা যাহা তোমাদের জন্য ধরিয়া আনে তাহা ভক্ষণ করিবে এবং ইহাতে আল্লাহ্‌র নাম নিবে আর আল্লাহ্‌কে ভয় করিবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত তৎপর।’

সূরা আল মায়েদা

৫-৫ : আজ তোমাদের জন্য সমস্ত ভাল আল জিনিস হালাল করা হইল, যাহাদেরকে কিতাব দেওয়া হইয়াছে তাহাদের খাদ্যদ্রব্য তোমাদের জন্য হালাল ও তোমাদের খাদ্যদ্রব্য তাহাদের জন্য হালাল; এবং মু’মিন সচ্চরিত্রা নারী ও তোমাদের পূর্বে যাহাদেরকে কিতাব দেওয়া হইয়াছে তাহাদের সচ্চরিত্রা নারী তোমাদের জন্য বৈধ করা হইল যদি তোমরা তাহাদের মাহ্‌র প্রদান কর বিবাহের জন্য - প্রকাশ্য ব্যভিচার অথবা গোপন প্রণয়িনী গ্রহণের জন্য নয়। কেহ ঈমান প্রত্যাখ্যান করিলে তাহার কর্ম নিষ্ফল হইবে এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হইবে।

সূরা আল মায়েদা

৫-৬ : হে মু’মিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হইবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করিবে এবং তোমাদের মাথা মসেহ্ করিবে এবং পা গ্রন্থি পর্যন্ত ধৌত করিবে; যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হইবে। তোমরা যদি পীড়িত হও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেহ শৌচস্থান হইতে আসে, অথবা তোমরা স্ত্রীর সঙ্গে সংগত হও এবং পানি না পাও তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করিবে এবং উহা দ্বারা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত মসেহ্ করিবে। আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না ; বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করিতে চান ও তোমাদের প্রতি তাঁহার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করিতে চান; যাহাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।

সূরা আল মায়েদা

৫-৭ : স্মরণ কর, তোমাদের প্রতি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ এবং যে অঙ্গীকারে তিনি তোমাদেরকে আবদ্ধ করিয়াছিলেন তাহা। যখন তোমরা বলিয়াছিলে, ‘শ্রবণ করিলাম ও মান্য করিলাম’ এবং আল্লাহ্‌কে ভয় কর ; অন্তরে যাহা আছে সে সম্বন্ধে আল্লাহ্ তো সবিশেষ অবহিত।

সূরা আল মায়েদা

৫-৮ : হে মু’মিনগণ! আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাকিবে ; কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদেরকে যেন কখনও সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে, সুবিচার করিবে, ইহা তাক্ওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহ্‌কে ভয় করিবে, তোমরা যাহা কর নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তাহার সম্যক খবর রাখেন।

সূরা আল মায়েদা

৫-৯ : যাহারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে আল্লাহ্‌ তাহাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন, তাহাদের জন্য ক্ষমা এবং মহাপুরস্কার আছে।

সূরা আল মায়েদা

৫-১০ : যাহারা কুফরী করে এবং আমার আয়াতকে মিথ্যা জ্ঞান করে তাহারা প্রজ্বলিত অগ্নির অধিবাসী।

সূরা আল মায়েদা

৫-১১ : হে মু’মিনগণ! তোমাদের প্রতি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ স্মরণ কর, যখন এক সম্প্রদায় তোমাদের বিরুদ্ধে হস্ত উত্তোলন করিতে চাহিয়াছিল, তখন আল্লাহ্‌ তাহাদের হাত তোমাদের দিক হইতে নিবৃত্ত করিয়াছিলেন। এবং আল্লাহ্‌কে ভয় কর, আর আল্লাহ্‌রই প্রতি মু’মিনগণ নির্ভর করুক।

সূরা আল মায়েদা

৫-১২ : আর আল্লাহ্‌ তো বনী ইসরাঈলের অঙ্গীকার গ্রহণ করিয়াছিলেন এবং তাহাদের মধ্য হইতে দ্বাদশ নেতা নিযুক্ত করিয়াছিলাম ; আর আল্লাহ্‌ বলিয়াছিলেন, ‘আমি তোমাদের সঙ্গে আছি ; তোমরা যদি সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও, আমার রাসূলগণের প্রতি ঈমান আন ও তাহাদেরকে সম্মান কর এবং আল্লাহ্‌কে উত্তম ঋণ প্রদান কর, তবে তোমাদের পাপ অবশ্যই মোচন করিব এবং নিশ্চয় তোমাদেরকে দাখিল করিব জান্নাতে, যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। ইহার পরও কেহ কুফরী করিলে সে তো সরল পথ হারাইবে।

সূরা আল মায়েদা

৫-১৩ : তাহাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের জন্য আমি তাহাদেরকে লা‘নত করিয়াছি ও তাহাদের হৃদয় কঠিন করিয়াছি ; তাহারা শব্দগুলির আসল অর্থ বিকৃত করে এবং তাহারা যাহা উপদিষ্ট হইয়াছিল উহার এক অংশ ভুলিয়া গিয়াছে। তুমি সর্বদা উহাদের অল্পসংখ্যক ব্যতীত সকলকেই বিশ্বাসঘাতকতা করিতে দেখিতে পাইবে, সুতরাং উহাদেরকে ক্ষমা কর ও উপেক্ষা কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ সৎকর্মপরায়ণদেরকে ভালবাসেন।

সূরা আল মায়েদা

৫-১৪ : যাহারা বলে, ‘আমরা খ্রিস্টান’, তাহাদেরও অঙ্গীকার গ্রহণ করিয়াছিলাম ; কিন্তু তাহারা যাহা উপদিষ্ট হইয়াছিল তাহার এক অংশ ভুলিয়া গিয়াছে। সুতরাং আমি তাহাদের মধ্যে কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী শত্রুতা ও বিদ্বেষ জাগরূক রাখিয়াছি ; তাহারা যাহা করিত আল্লাহ্‌ তাহাদেরকে অচিরেই তাহা জানাইয়া দিবেন।

সূরা আল মায়েদা

৫-১৫ : হে কিতাবীগণ! আমার রাসূল তোমাদের নিকট আসিয়াছে, তোমরা কিতাবের যাহা গোপন করিতে সে উহার অনেক কিছু তোমাদের নিকট প্রকাশ করে এবং অনেক কিছু উপেক্ষা করিয়া থাকে। আল্লাহ্‌র নিকট হইতে এক জ্যোতি ও স্পষ্ট কিতাব তোমাদের নিকট আসিয়াছে।

সূরা আল মায়েদা

৫-১৬ : যাহারা আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভ করিতে চায়, ইহা দ্বারা তিনি তাহাদেরকে শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং নিজ অনুমতিক্রমে অন্ধকার হইতে বাহির করিয়া আলোর দিকে লইয়া যান এবং উহাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন।

সূরা আল মায়েদা

৫-১৭ : যাহারা বলে, ‘মার্‌ইয়াম - তনয় মসীহ্ই আল্লাহ্’, তাহারা তো কুফরী করিয়াছেই। বল, ‘আল্লাহ্ মার্‌ইয়াম - তনয় মসীহ্, তাঁহার মাতা এবং দুনিয়ার সকলকে যদি ধ্বংস করিতে ইচ্ছা করেন তবে তাঁহাকে বাধা দিবার শক্তি কাহার আছে ?’ আসমান ও যমীনের এবং ইহাদের মধ্যে যাহা কিছু আছে তাহার সার্বভৌমত্ব আল্লাহ্‌রই। তিনি যাহা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।

সূরা আল মায়েদা

৫-১৮ : ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানগণ বলে, ‘আমরা আল্লাহ্‌র পুত্র ও তাঁহার প্রিয়।’ বল, ‘তবে কেন তিনি তোমাদের পাপের জন্য তোমাদেরকে শাস্তি দেন ? না, তোমরা মানুষ তাহাদেরই মতো যাহাদেরকে আল্লাহ্ সৃষ্টি করিয়াছেন।’ যাহাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করেন এবং যাহাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দেন ; আস্‌মান ও যমীনের এবং ইহাদের মধ্যে যাহা কিছু আছে তাহার সার্বভৌমত্ব আল্লাহ্‌রই, আর প্রত্যাবর্তন তাঁহারই দিকে।

সূরা আল মায়েদা

৫-১৯ : হে কিতাবীগণ! রাসূল প্রেরণে বিরতির পর আমার রাসূল তোমাদের নিকট আসিয়াছে। সে তোমাদের নিকট স্পষ্ট ব্যাখ্যা করিতেছে যাহাতে তোমরা বলিতে না পার, ‘কোন সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারী আমাদের নিকট আসে নাই।’ এখন তো তোমাদের নিকট একজন সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী আসিয়াছে। আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।

সূরা আল মায়েদা

৫-২০ : স্মরণ কর, যখন মূসা তাহার সম্প্রদায়কে বলিয়াছিল, ‘হে আমার সম্প্রদায় ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ স্মরণ কর, যখন তিনি তোমাদের মধ্য হইতে নবী করিয়াছিলেন ও তোমাদেরকে রাজ্যাধিপতি করিয়াছিলেন এবং বিশ্বজগতে কাহাকেও যাহা তিনি দেন নাই তাহা তোমাদেরকে দিয়াছিলেন।

সূরা আল মায়েদা

৫-২১ : ‘হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ্ তোমাদের জন্য যে পবিত্র ভূমি নির্দিষ্ট করিয়াছেন তাহাতে তোমরা প্রবেশ কর এবং পশ্চাদপসরণ করিও না; করিলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হইয়া পড়িবে।’

সূরা আল মায়েদা

৫-২২ : তাহারা বলিল, ‘হে মূসা! সেখানে এক দুর্দান্ত সম্প্রদায় রহিয়াছে এবং তাহারা সেই স্থান হইতে বাহির না হওয়া পর্যন্ত আমরা কখনই সেখানে কিছুতেই প্রবেশ করিব না; তাহারা সেই স্থান হইতে বাহির হইয়া গেলেই আমরা প্রবেশ করিব।’

সূরা আল মায়েদা

৫-২৩ : যাহারা ভয় করিতেছিল তাহাদের মধ্যে দুইজন - যাহাদের প্রতি আল্লাহ্ অনুগ্রহ করিয়াছিলেন, তাহারা বলিল, ‘তোমরা তাহাদের মুকাবিলা করিয়া দ্বার দিয়া প্রবেশ কর, প্রবেশ করিলেই তোমরা জয়ী হইবে এবং তোমরা মু’মিন হইলে আল্লাহ্‌র উপরই নির্ভর কর।’

সূরা আল মায়েদা

৫-২৪ : তাহারা বলিল, ‘হে মূসা! তাহারা যত দিন সেখানে থাকিবে তত দিন আমরা সেখানে প্রবেশ করিবই না; সুতরাং তুমি আর তোমার প্রতিপালক যাও এবং যুদ্ধ কর, আমরা এখানেই বসিয়া থাকিব।’

সূরা আল মায়েদা

৫-২৫ : সে বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার ও আমার ভ্রাতা ব্যতীত অপর কাহারও উপর আমার আধিপত্য নাই; সুতরাং তুমি আমাদের ও সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের মধ্যে ফয়সালা করিয়া দাও।’

সূরা আল মায়েদা

৫-২৬ : আল্লাহ্ বলিলেন, ‘তবে ইহা চল্লিশ বৎসর তাহাদের জন্য নিষিদ্ধ রহিল, তাহারা পৃথিবীতে উদ্ভ্রন্ত হইয়া ঘুরিয়া বেড়াইবে, সুতরাং তুমি সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের জন্য দুঃখ করিও না।’

সূরা আল মায়েদা

৫-২৭ : আদমের দুই পুত্রের বৃত্তান্ত তুমি তাহাদেরকে যথাযথভাবে শোনাও। যখন তাহারা উভয়ে কুরবানী করিয়াছিল তখন একজনের কুরবানী কবূল হইল এবং অন্যজনের কবূল হইল না। সে বলিল, ‘আমি তোমাকে হত্যা করিবই।’ অপরজন বলিল, ‘অবশ্যই আল্লাহ্ মুত্তাকীদের কুরবানী কবূল করেন।’

সূরা আল মায়েদা

৫-২৮ : ‘আমাকে হত্যা করার জন্য তুমি হাত তুলিলেও তোমাকে হত্যা করার জন্য আমি হাত তুলিব না; আমি তো জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ্‌কে ভয় করি।’

সূরা আল মায়েদা

৫-২৯ : ‘তুমি আমার ও তোমার পাপের ভার বহন কর এবং দোজখবাসী হও - ইহাই আমি চাই এবং ইহা জালিমদের কর্মফল।’

সূরা আল মায়েদা

৫-৩০ : অতঃপর তাহার চিত্ত ভ্রাতৃহত্যায় তাহাকে উত্তেজিত করিল। ফলে সে তাহাকে হত্যা করিল; তাই সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হইল।

সূরা আল মায়েদা

৫-৩১ : অতঃপর আল্লাহ্ একটি কাক পাঠাইলেন, যে তাহার ভ্রাতার শবদেহ কিভাবে গোপন করা যায় তাহা দেখাইবার জন্য মাটি খনন করিতে লাগিল। সে বলিল, ‘হায়! আমি কি এই কাকের মতও হইতে পারিলাম না, যাহাতে আমার ভ্রাতার শবদেহ গোপন করিতে পারি!’ অতঃপর সে অনুতপ্ত হইল।

সূরা আল মায়েদা

৫-৩২ : এই কারণেই বনী ইসরাঈলের প্রতি বিধান দিলাম যে, নরহত্যা অথবা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করা হেতু ব্যতীত কেহ কাহাকেও হত্যা করিলে সে যেন দুনিয়ার সকল মানুষকেই হত্যা করিল ; আর কেহ কাহারও প্রাণ রক্ষা করিলে সে যেন সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করিল। তাহাদের নিকট তো আমার রাসূলগণ স্পষ্ট প্রমাণ আনিয়াছিল, কিন্তু ইহার পরও তাহাদের অনেকে দুনিয়ায় সীমালংঘন - কারীই রহিয়া গেল।

সূরা আল মায়েদা

৫-৩৩ : যাহারা আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করিয়া বেড়ায় ইহাই তাহাদের শাস্তি যে, তাহাদেরকে হত্যা করা হইবে অথবা ক্রুশবিদ্ধ করা হইবে অথবা বিপরীত দিক হইতে তাহাদের হাত ও পা কাটিয়া ফেলা হইবে অথবা তাহাদেরকে দেশ হইতে নির্বাসিত করা হইবে। দুনিয়ায় ইহাই তাহাদের লাঞ্ছনা ও পরকালে তাহাদের জন্য মহাশাস্তি রহিয়াছে;

সূরা আল মায়েদা

৫-৩৪ : তবে, তোমাদের আয়ত্তাধীনে আসিবার পূর্বে যাহারা তওবা করিবে তাহাদের জন্য নয়। সুতরাং জানিয়া রাখ, আল্লাহ্ অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

সূরা আল মায়েদা

৫-৩৫ : হে মু’মিনগণ! আল্লাহ্‌কে ভয় কর, তাঁহার নৈকট্য লাভের উপায় অন্বেষণ কর ও তাঁহার পথে সংগ্রাম কর, যাহাতে তোমরা সফলকাম হইতে পার।

সূরা আল মায়েদা

৫-৩৬ : যাহারা কুফরী করিয়াছে, কিয়ামতের দিন শাস্তি হইতে মুক্তির জন্য পণস্বরূপ দুনিয়ায় যাহা কিছু আছে, যদি তাহাদের তাহার সমস্তই থাকে এবং তাহার সঙ্গে সমপরিমাণ আরও থাকে, তবুও তাহাদের নিকট হইতে তাহা গৃহীত হইবে না এবং তাহাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রহিয়াছে।

সূরা আল মায়েদা

৫-৩৭ : তাহারা দোজখ হইতে বাহির হইতে চাহিবে; কিন্তু তাহারা উহা হইতে বাহির হইবার নয় এবং তাহাদের জন্য স্থায়ী শাস্তি রহিয়াছে।

সূরা আল মায়েদা

৫-৩৮ : পুরুষ চোর এবং নারী চোর, তাহাদের হস্তচ্ছেদন কর; ইহা তাহাদের কৃতকর্মের ফল এবং আল্লাহ্‌র পক্ষ হইতে দৃষ্টান্তমূলক দণ্ড; আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

সূরা আল মায়েদা

৫-৩৯ : কিন্তু সীমালংঘন করার পর কেহ তওবা করিলে ও নিজেকে সংশোধন করিলে অবশ্যই আল্লাহ্ তাহার তওবা কবূল করিবেন; আল্লাহ্ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

সূরা আল মায়েদা

৫-৪০ : তুমি কি জান না, আসমান ও যমীনের সার্বভৌমত্ব আল্লাহ্‌রই ? যাহাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দেন আর যাহাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করেন এবং আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।

সূরা আল মায়েদা

৫-৪১ : হে রাসূল! তোমাকে যেন দুঃখ না দেয় যাহারা কুফরীর দিকে দ্রুত ধাবিত হয় - যাহারা মুখে বলে, ‘ঈমান আনিয়াছি’, অথচ তাহাদের অন্তর ঈমান আনে না এবং ইয়াহূদীদের মধ্যে যাহারা অসত্য শ্রবণে তৎপর, তোমার নিকট আসে না এমন এক ভিন্ন দলের পক্ষে যাহারা কান পাতিয়া থাকে। শব্দগুলি যথাযথ সুবিন্যস্ত থাকার পরও তাহারা সেগুলির অর্থ বিকৃত করে। তাহারা বলে, ‘এই প্রকার বিধান দিলে গ্রহণ করিও এবং উহা না দিলে বর্জন করিও।’ এবং আল্লাহ্ যাহার পথচ্যুতি চান তাহার জন্য আল্লাহ্‌র নিকট তোমার কিছুই করিবার নাই। তাহাদের হৃদয়কে আল্লাহ্ বিশুদ্ধ করিতে চান না; তাহাদের জন্য আছে দুনিয়ায় লাঞ্ছনা আর আখিরাতে রহিয়াছে তাহাদের জন্য মহাশাস্তি।

সূরা আল মায়েদা

৫-৪২ : তাহারা মিথ্যা শ্রবণে অত্যন্ত আগ্রহশীল এবং অবৈধ ভক্ষণে অত্যন্ত আসক্ত; তাহারা যদি তোমার নিকট আসে তবে তাহাদের বিচার নিষ্পত্তি করিও অথবা তাহাদেরকে উপেক্ষা করিও। তুমি যদি তাহাদেরকে উপেক্ষা কর তবে তাহারা তোমার কোন ক্ষতি করিতে পারিবে না। আর যদি বিচার নিষ্পত্তি কর তবে তাহাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করিও ; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ন্যায়পরায়ণদের ভালবাসেন।

সূরা আল মায়েদা

৫-৪৩ : তাহারা তোমার উপর কিরূপে বিচারভার ন্যস্ত করিবে অথচ তাহাদের নিকট রহিয়াছে তাওরাত যাহাতে আল্লাহ্‌র আদেশ আছে ? ইহার পরও তাহারা মুখ ফিরাইয়া নেয় এবং উহারা মু’মিন নয়।

সূরা আল মায়েদা

৫-৪৪ : নিশ্চয়ই আমি তাওরাত অবতীর্ণ করিয়াছিলাম; উহাতে ছিল পথনির্দেশ ও আলো; নবীগণ, যাহারা আল্লাহ্‌র অনুগত ছিল তাহারা ইয়াহূদীদেরকে তদনুসারে বিধান দিত, আরও বিধান দিত রাব্বানীগণ এবং বিদ্বানগণ; কারণ তাহাদেরকে আল্লাহ্‌র কিতাবের রক্ষক করা হইয়াছিল এবং তাহারা ছিল উহার সাক্ষী। সুতরাং মানুষকে ভয় করিও না, আমাকেই ভয় কর এবং আমার আয়াতসমূহ তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করিও না। আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তদনুসারে যাহারা বিধান দেয় না, তাহারাই কাফির।

সূরা আল মায়েদা

৫-৪৫ : আমি তাহাদের জন্য উহাতে বিধান দিয়াছিলাম, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং যখমের বদলে অনুরূপ যখম। অতঃপর কেহ উহা ক্ষমা করিলে উহাতে তাহারই পাপ মোচন হইবে। আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তদনুসারে যাহারা বিধান দেয় না, তাহারাই জালিম।

সূরা আল মায়েদা

৫-৪৬ : মার্‌ইয়াম - তনয় ‘ঈসাকে তাহার পূর্বে অবতীর্ণ তাওরাতের প্রত্যায়নকারীরূপে উহাদের পশ্চাতে প্রেরণ করিয়াছিলাম এবং তাহার পূর্বে অবতীর্ণ তাওরাতের প্রত্যায়নকারীরূপে এবং মুত্তাকীদের জন্য পথনির্দেশ ও উপদেশরূপে তাহাকে ইন্‌জীল দিয়াছিলাম; উহাতে ছিল পথনির্দেশ ও আলো।

সূরা আল মায়েদা

৫-৪৭ : ইন্‌জীল - অনুসারিগণ যেন, আল্লাহ্ উহাতে যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তদনুসারে বিধান দেয়। আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তদনুসারে যাহারা বিধান দেয় না, তাহারাই ফাসিক।

সূরা আল মায়েদা

৫-৪৮ : আমি তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছি ইহার পূর্বে অবতীর্ণ কিতাবের প্রত্যায়নকারী ও সংরক্ষকরূপে। সুতরাং আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তদনুসারে তুমি তাহাদের বিচার নিষ্পত্তি করিও এবং যে সত্য তোমার নিকট আসিয়াছে তাহা ত্যাগ করিয়া তাহাদের খেয়াল - খুশির অনুসরণ করিও না। তোমাদের প্রত্যেকের জন্য শরী‘আত ও স্পষ্ট পথ নির্ধারণ করিয়াছি। ইচ্ছা করিলে আল্লাহ্ তোমাদেরকে এক জাতি করিতে পারিতেন, কিন্তু তিনি তোমাদেরকে যাহা দিয়াছেন তদ্‌দ্বারা তোমাদেরকে পরীক্ষা করিতে চান। সুতরাং সৎকর্মে তোমরা প্রতিযোগিতা কর। আল্লাহ্‌র দিকেই তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করিতেছিলে, সে সম্বন্ধে তিনি তোমাদেরকে অবহিত করিবেন।

সূরা আল মায়েদা

৫-৪৯ : কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছি যাহাতে তুমি আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তদনুযায়ী তাহাদের বিচারনিষ্পত্তি কর, তাহাদের খেয়াল - খুশির অনুসরণ না কর এবং তাহাদের সম্বন্ধে সতর্ক হও যাহাতে আল্লাহ্ যাহা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করিয়াছেন উহারা তাহার কিছু হইতে তোমাকে বিচ্যুত না করে। যদি তাহারা মুখ ফিরাইয়া নেয় তবে জানিয়া রাখ যে, তাহাদের কোন কোন পাপের জন্য আল্লাহ্ তাহাদেরকে শাস্তি দিতে চান এবং মানুষের মধ্যে অনেকেই তো সত্যত্যাগী।

সূরা আল মায়েদা

৫-৫০ : তবে কি তাহারা জাহিলী যুগের বিধি - বিধান কামনা করে? নিশ্চিত বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিধানদানে আল্লাহ্ অপেক্ষা কে শ্রেষ্ঠতর ?

সূরা আল মায়েদা

৫-৫১ : হে মু’মিনগণ! তোমরা ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করিও না, তাহারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেহ তাহাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করিলে সে তাহাদেরই একজন হইবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ জালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।

সূরা আল মায়েদা

৫-৫২ : এবং যাহাদের অন্তঃকরণে ব্যাধি রহিয়াছে তুমি তাহাদেরকে সত্বর তাহাদের সঙ্গে মিলিত হইতে দেখিবে এই বলিয়া, ‘আমাদের আশংকা হয় আমাদের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটিবে।’ হয়তো আল্লাহ্ বিজয় অথবা তাঁহার নিকট হইতে এমন কিছু দিবেন যাহাতে তাহারা তাহাদের অন্তরে যাহা গোপন রাখিয়াছিল তজ্জন্য অনুতপ্ত হইবে।

সূরা আল মায়েদা

৫-৫৩ : এবং মু’মিনগণ বলিবে, ‘ইহারাই কি তাহারা, যাহারা আল্লাহ্‌র নামে দৃঢ়ভাবে শপথ করিয়াছিল যে, তাহারা তোমাদের সঙ্গেই আছে?’ তাহাদের কাজ নিষ্ফল হইয়াছে ; ফলে তাহারা ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে।

সূরা আল মায়েদা

৫-৫৪ : হে মু’মিনগণ! তোমাদের মধ্যে কেহ দীন হইতে ফিরিয়া গেলে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ এমন এক সম্প্রদায় আনিবেন যাহাদেরকে তিনি ভালবাসিবেন এবং যাহারা তাঁহাকে ভালবাসিবে; তাহারা মু’মিনদের প্রতি কোমল ও কাফিরদের প্রতি কঠোর হইবে; তাহারা আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করিবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করিবে না; ইহা আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ, যাহাকে ইচ্ছা তিনি দান করেন এবং আল্লাহ্ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।

সূরা আল মায়েদা

৫-৫৫ : তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ্, তাঁহার রাসূল ও মু’মিনগণ - যাহারা বিনত হইয়া সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়।

সূরা আল মায়েদা

৫-৫৬ : কেহ আল্লাহ্, তাঁহার রাসূল এবং মু’মিনদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করিলে আল্লাহ্‌র দলই তো বিজয়ী হইবে।

সূরা আল মায়েদা

৫-৫৭ : হে মু’মিনগণ ! তোমাদের পূর্বে যাহাদেরকে কিতাব দেওয়া হইয়াছে তাহাদের মধ্যে যাহারা তোমাদের দীনকে হাসি - তামাশা ও ক্রীড়ার বস্তুরূপে গ্রহণ করে তাহাদেরকে ও কাফিরদেরকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করিও না এবং যদি তোমরা মু’মিন হও তবে আল্লাহ্‌কে ভয় কর।

সূরা আল মায়েদা

৫-৫৮ : তোমরা যখন সালাতের জন্য আহ্বান কর তখন তাহারা উহাকে হাসি - তামাশা ও ক্রীড়ার বস্তুরূপে গ্রহণ করে - ইহা এইহেতু যে, তাহারা এমন এক সম্প্রদায় যাহাদের বোধশক্তি নাই।

সূরা আল মায়েদা

৫-৫৯ : বল, ‘হে কিতাবীগণ! একমাত্র এই কারণেই না তোমরা আমাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ কর যে, আমরা আল্লাহ্ ও আমাদের প্রতি যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে এবং যাহা পূর্বে অবতীর্ণ হইয়াছে তাহাতে আমরা ঈমান আনিয়াছি এবং তোমাদের অধিকাংশই তো ফাসিক।’

সূরা আল মায়েদা

৫-৬০ : বল, ‘আমি কি তোমাদেরকে ইহা অপেক্ষা নিকৃষ্ট পরিণামের সংবাদ দিব যাহা আল্লাহ্‌র নিকট আছে? যাহাকে আল্লাহ্‌ লা‘নত করিয়াছেন, যাহার উপর তিনি ক্রোধান্বিত, যাহাদের কতককে তিনি বানর ও কতককে শূকর করিয়াছেন এবং যাহারা তাগূতের ‘ইবাদত করে, মর্যাদায় তাহারাই নিকৃষ্ট এবং সরল পথ হইতে সর্বাধিক বিচ্যুত।’

সূরা আল মায়েদা

৫-৬১ : তাহারা যখন তোমাদের নিকট আসে তখন বলে, ‘আমরা ঈমান আনিয়াছি’, কিন্তু তাহারা কুফর লইয়াই প্রবেশ করে এবং উহা লইয়াই বাহির হইয়া যায়। তাহারা যাহা গোপন করে, আল্লাহ্ তাহা বিশেষভাবে অবহিত।

সূরা আল মায়েদা

৫-৬২ : তাহাদের অনেককেই তুমি দেখিবে পাপে, সীমালংঘনে ও অবৈধ ভক্ষণে তৎপর ; তাহারা যাহা করে নিশ্চয় তাহা নিকৃষ্ট।

সূরা আল মায়েদা

৫-৬৩ : রাব্বানীগণ ও পণ্ডিতগণ কেন তাহাদেরকে পাপ কথা বলিতে ও অবৈধ ভক্ষণে নিষেধ করে না ? ইহারা যাহা করে নিশ্চয় তাহাও নিকৃষ্ট।

সূরা আল মায়েদা

৫-৬৪ : ইয়াহূদীরা বলে, ‘আল্লাহ্‌র হাত রুদ্ধ’; উহারাই রুদ্ধহস্ত এবং উহারা যাহা বলে তজ্জন্য উহারা অভিশপ্ত, বরং আল্লাহ্‌র উভয় হস্তই প্রসারিত; যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান করেন। তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে যাহা তোমার প্রতি অবতীর্ণ হইয়াছে তাহা তাহাদের অনেকের ধর্মদ্রোহিতা ও কুফরী বৃদ্ধি করিবেই। তাহাদের মধ্যে আমি কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করিয়াছি। যতবার তাহারা যুদ্ধের অগ্নি প্রজ্বলিত করে ততবার আল্লাহ্ উহা নির্বাপিত করেন এবং তাহারা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করিয়া বেড়ায়; আল্লাহ্ ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্তদেরকে ভালবাসেন না।

সূরা আল মায়েদা

৫-৬৫ : কিতাবীগণ যদি ঈমান আনিত ও ভয় করিত তাহা হইলে আমি তাহাদের দোষ অবশ্যই অপনোদন করিতাম এবং তাহাদেরকে সুখময় জান্নাতে দাখিল করিতাম।

সূরা আল মায়েদা

৫-৬৬ : তাহারা যদি তাওরাত, ইন্‌জীল ও তাহাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে তাহাদের প্রতি যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে তাহা প্রতিষ্ঠিত করিত, তাহা হইলে তাহারা তাহাদের উপর ও পদতল হইতে আহার্য লাভ করিত। তাহাদের মধ্যে একদল রহিয়াছে যাহারা মধ্যপন্থী; কিন্তু তাহাদের অধিকাংশ যাহা করে তাহা নিকৃষ্ট।

সূরা আল মায়েদা

৫-৬৭ : হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমার প্রতি যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে তাহা প্রচার কর ; যদি না কর তবে তো তুমি তাঁহার বার্তা প্রচার করিলে না। আল্লাহ্ তোমাকে মানুষ হইতে রক্ষা করিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কাফির সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।

সূরা আল মায়েদা

৫-৬৮ : বল, ‘হে কিতাবীগণ! তাওরাত, ইন্‌জীল ও যাহা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ হইয়াছে তোমরা তাহা প্রতিষ্ঠিত না করা পর্যন্ত তোমাদের কোন ভিত্তিই নাই।’ তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমার প্রতি যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে তাহা তাহাদের অনেকের ধর্মদ্রোহিতা ও অবিশ্বাসই বর্ধিত করিবে। সুতরাং তুমি কাফির সম্প্রদায়ের জন্য দুঃখ করিও না।

সূরা আল মায়েদা

৫-৬৯ : মু’মিনগণ, ইয়াহূদীগণ, সাবীগণ ও খ্রিস্টানগণের মধ্যে কেহ আল্লাহ্ ও আখিরাতে ঈমান আনিলে এবং সৎকাজ করিলে তাহাদের কোন ভয় নাই এবং তাহারা দুঃখিত হইবে না।

সূরা আল মায়েদা

৫-৭০ : আমি বনী ইসরাঈলের নিকট হইতে অঙ্গীকার গ্রহণ করিয়াছিলাম ও তাহাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করিয়াছিলাম। যখনই কোন রাসূল তাহাদের নিকট এমন কিছু আনে যাহা তাহাদের মনঃপূত নয়, তখনই তাহারা কতককে মিথ্যাবাদী বলে ও কতককে হত্যা করে।

সূরা আল মায়েদা

৫-৭১ : তাহারা মনে করিয়াছিল, তাহাদের কোন শাস্তি হইবে না ; ফলে তাহারা অন্ধ ও বধির হইয়া গিয়াছিল। অতঃপর আল্লাহ্ তাহাদের প্রতি ক্ষমাশীল হইয়াছিলেন। পুনরায় তাহাদের অনেকেই অন্ধ ও বধির হইয়াছিল। তাহারা যাহা করে আল্লাহ্ তাহার সম্যক দ্রষ্টা।

সূরা আল মায়েদা

৫-৭২ : যাহারা বলে, ‘আল্লাহ্‌ই মার্‌ইয়াম - তনয় মসীহ্’, তাহারা তো কুফরী করিয়াছেই। অথচ মসীহ্ বলিয়াছিল, ‘হে বনী ইস্‌রাঈল! তোমরা আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্‌র ‘ইবাদত কর।’ কেহ আল্লাহ্‌র শরীক করিলে আল্লাহ্ তাহার জন্য জান্নাত অবশ্যই নিষিদ্ধ করিবেন এবং তাহার আবাস জাহান্নাম। জালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নাই।

সূরা আল মায়েদা

৫-৭৩ : যাহারা বলে, ‘আল্লাহ্ তো তিনের মধ্যে একজন, তাহারা তো কুফরী করিয়াছেই - যদিও এক ইলাহ্ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নাই। তাহারা যাহা বলে তাহা হইতে নিবৃত্ত না হইলে তাহাদের মধ্যে যাহারা কুফরী করিয়াছে, তাহাদের উপর অবশ্যই মর্মন্তুদ শাস্তি আপতিত হইবেই।

সূরা আল মায়েদা

৫-৭৪ : তবে কি তাহারা আল্লাহ্‌র দিকে প্রত্যাবর্তন করিবে না ও তাঁহার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিবে না ? আল্লাহ্ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

সূরা আল মায়েদা

৫-৭৫ : মার্‌ইয়াম - তনয় মসীহ্ তো কেবল একজন রাসূল। তাহার পূর্বে বহু রাসূল গত হইয়াছে এবং তাহার মাতা পরম সত্যনিষ্ঠ ছিল। তাহারা উভয়ে খাদ্যাহার করিত। দেখ, আমি উহাদের জন্য আয়াতসমূহ কিরূপ বিশদভাবে বর্ণনা করি; আরও দেখ, উহারা কিভাবে সত্যবিমুখ হয়।

সূরা আল মায়েদা

৫-৭৬ : বল, ‘তোমরা কি আল্লাহ্ ব্যতীত এমন কিছুর ‘ইবাদত কর, তোমাদের ক্ষতি বা উপকার করার কোন ক্ষমতা যাহার নাই ? আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’

সূরা আল মায়েদা

৫-৭৭ : বল, ‘হে কিতাবীগণ! তোমরা তোমাদের দীন সম্বন্ধে অন্যায় বাড়াবাড়ি করিও না; এবং যে সম্প্রদায় ইতোপূর্বে পথভ্রষ্ট হইয়াছে, অনেককে পথভ্রষ্ট করিয়াছে ও সরল পথ হইতে বিচ্যুত হইয়াছে, তাহাদের খেয়াল - খুশির অনুসরণ করিও না।’

সূরা আল মায়েদা

৫-৭৮ : বনী ইস্‌রাঈলের মধ্যে যাহারা কুফরী করিয়াছিল তাহারা দাঊদ ও মার্‌ইয়াম - তনয় কর্তৃক অভিশপ্ত হইয়াছিল - ইহা এহেতু যে, তাহারা ছিল অবাধ্য ও সীমালংঘনকারী।

সূরা আল মায়েদা

৫-৭৯ : তাহারা যেসব গর্হিত কাজ করিত উহা হইতে তাহারা একে অন্যকে বারণ করিত না। তাহারা যাহা করিত তাহা কতই না নিকৃষ্ট।

সূরা আল মায়েদা

৫-৮০ : তাহাদের অনেককে তুমি কাফিরদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করিতে দেখিবে। কত নিকৃষ্ট তাহাদের কৃতকর্ম! - যে কারণে আল্লাহ্ তাহাদের উপর ক্রোধান্বিত হইয়াছেন। তাহাদের শাস্তিভোগ স্থায়ী হইবে।

সূরা আল মায়েদা

৫-৮১ : তাহারা আল্লাহে, নবীতে ও তাহার প্রতি যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে তাহাতে ঈমান আনিলে উহাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করিত না, কিন্তু তাহাদের অনেকে ফাসিক।

সূরা আল মায়েদা

৫-৮২ : অবশ্য মু’মিনদের প্রতি শত্রুতায় মানুষের মধ্যে ইয়াহূদী ও মুশরিকদেরকেই তুমি সর্বাধিক উগ্র দেখিবে এবং যাহারা বলে ‘আমরা খ্রিস্টান’ মানুষের মধ্যে তাহাদেরকেই তুমি মু’মিনদের নিকটতর বন্ধুত্বে দেখিবে; কারণ তাহাদের মধ্যে অনেক পণ্ডিত ও সংসার - বিরাগী আছে, আর তাহারা অহংকারও করে না।

সূরা আল মায়েদা

৫-৮৩ : রাসূলের প্রতি যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে তাহা যখন তাহারা শ্রবণ করে তখন তাহারা যে সত্য উপলব্ধি করে তাহার জন্য তুমি তাহাদের চক্ষু অশ্রু - বিগলিত দেখিবে। তাহারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান আনিয়াছি; সুতরাং তুমি আমাদেরকে সাক্ষ্যদানকারীদের তালিকাভুক্ত কর।’

সূরা আল মায়েদা

৫-৮৪ : আল্লাহে ও আমাদের নিকট আগত সত্যে আমাদের ঈমান না আনার কী কারণ থাকিতে পারে যখন আমরা প্রত্যাশা করি, ‘আল্লাহ্ আমাদেরকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভূক্ত করুন?’

সূরা আল মায়েদা

৫-৮৫ : এবং তাহাদের এই কথার জন্য আল্লাহ্ তাহাদের পুরস্কার নির্দিষ্ট করিয়াছেন জান্নাত - যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; তাহারা সেখানে স্থায়ী হইবে। ইহা সৎকর্মপরায়ণদের পুরস্কার।

সূরা আল মায়েদা

৫-৮৬ : যাহারা কুফরী করিয়াছে ও আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করিয়াছে তাহারাই জাহান্নামবাসী।

সূরা আল মায়েদা

৫-৮৭ : হে মু’মিনগণ! আল্লাহ্ তোমাদের জন্য উৎকৃষ্ট যেসব বস্তু হালাল করিয়াছেন সেই সমুদয়কে তোমরা হারাম করিও না এবং সীমালংঘন করিও না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সীমালংঘনকারীদেরকে পসন্দ করেন না।

সূরা আল মায়েদা

৫-৮৮ : আল্লাহ্ তোমাদেরকে যে হালাল ও উৎকৃষ্ট জীবিকা দিয়াছেন তাহা হইতে ভক্ষণ কর এবং ভয় কর আল্লাহকে, যাঁহার প্রতি তোমরা বিশ্বাসী।

সূরা আল মায়েদা

৫-৮৯ : তোমাদের বৃথা শপথের জন্য আল্লাহ্ তোমাদেরকে দায়ী করিবেন না, কিন্তু যেসব শপথ তোমরা ইচ্ছাকৃতভাবে কর সেই সকলের জন্য তিনি তোমাদেরকে দায়ী করিবেন। অতঃপর ইহার কাফ্‌ফারা দশজন দরিদ্রকে মধ্যম ধরনের আহার্য দান, যাহা তোমরা তোমাদের পরিজনদের খাইতে দাও, অথবা তাহাদেরকে বস্ত্রদান, কিংবা একজন দাস মুক্তি এবং যাহার সামর্থ্য নাই তাহার জন্য তিনদিন সিয়াম পালন। তোমরা শপথ করিলে ইহাই তোমাদের শপথের কাফ্‌ফারা, তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা করিও। এইভাবে আল্লাহ্ তোমাদের জন্য তাঁহার বিধানসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।

সূরা আল মায়েদা

৫-৯০ : হে মু’মিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা উহা বর্জন কর - যাহাতে তোমরা সফলকাম হইতে পার।

সূরা আল মায়েদা

৫-৯১ : শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাইতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহ্‌র স্মরণে ও সালাতে বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হইবে না ?

সূরা আল মায়েদা

৫-৯২ : তোমরা আল্লাহ্‌র আনুগত্য কর ও রাসূলের আনুগত্য কর এবং সতর্ক হও; যদি তোমরা মুখ ফিরাইয়া নেও তবে জানিয়া রাখ, স্পষ্ট প্রচারই আমার রাসূলের কর্তব্য।

সূরা আল মায়েদা

৫-৯৩ : যাহারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাহারা পূর্বে যাহা ভক্ষণ করিয়াছে তজ্জন্য তাহাদের কোন গুনাহ্ নাই; যদি তাহারা সাবধান হয় এবং ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, সাবধান হয় ও বিশ্বাস করে, পুনরায় সাবধান হয় ও সৎকর্ম করে এবং আল্লাহ্ সৎকর্মপরায়ণদেরকে ভালবাসেন।

সূরা আল মায়েদা

৫-৯৪ : হে মু’মিনগণ! তোমাদের হাত ও বর্শা যাহা শিকার করে সে বিষয়ে আল্লাহ্ অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করিবেন, যাহাতে আল্লাহ্ অবহিত হন কে তাঁহাকে না দেখিয়াও ভয় করে। সুতরাং ইহার পর কেহ সীমালংঘন করিলে তাহার জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রহিয়াছে।

সূরা আল মায়েদা

৫-৯৫ : হে মু’মিনগণ! ইহ্‌রামে থাকাকালে তোমরা শিকার - জন্তু হত্যা করিও না; তোমাদের মধ্যে কেহ ইচ্ছাকৃতভাবে উহা হত্যা করিলে যাহা সে হত্যা করিল তাহার বিনিময় হইতেছে অনুরূপ গৃহপালিত জন্তু, যাহার ফয়সালা করিবে তোমাদের মধ্যে দুইজন ন্যায়বান লোক - কা‘বায় প্রেরিতব্য কুরবানীরূপে। অথবা উহার কাফ্‌ফারা হইবে দরিদ্রকে খাদ্য দান করা কিংবা সমসংখ্যক সিয়াম পালন করা, যাহাতে সে আপন কৃতকর্মের ফল ভোগ করে। যাহা গত হইয়াছে আল্লাহ্ তাহা ক্ষমা করিয়াছেন। কেহ উহা পুনরায় করিলে আল্লাহ্ তাহার শাস্তি দিবেন এবং আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, শাস্তিদাতা।

সূরা আল মায়েদা

৫-৯৬ : তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও উহা ভক্ষণ হালাল করা হইয়াছে, তোমাদের ও পর্যটকদের ভোগের জন্য। তোমরা যতক্ষণ ইহ্‌রামে থাকিবে ততক্ষণ স্থলের শিকার তোমাদের জন্য হারাম। তোমরা ভয় কর আল্লাহ্‌কে, যাঁহার নিকট তোমাদেরকে একত্র করা হইবে।

সূরা আল মায়েদা

৫-৯৭ : পবিত্র কা‘বাগৃহ, পবিত্র মাস, কুরবানীর জন্য কা‘বায় প্রেরিত পশু ও গলায় মালা পরিহিত পশুকে আল্লাহ্ মানুষের কল্যাণের জন্য নির্ধারণ করিয়াছেন। ইহা এইহেতু যে, তোমরা যেন জানিতে পার - যাহা কিছু আসমান ও যমীনে আছে আল্লাহ্ তাহা জানেন এবং আল্লাহ্ তো সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।

সূরা আল মায়েদা

৫-৯৮ : জানিয়া রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ শাস্তিদানে কঠোর এবং আল্লাহ্ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

সূরা আল মায়েদা

৫-৯৯ : প্রচার করাই কেবল রাসূলের কর্তব্য। আর তোমরা যাহা প্রকাশ কর ও গোপন রাখ আল্লাহ্ তাহা জানেন।

সূরা আল মায়েদা

৫-১০০ : বল, ‘মন্দ ও ভাল এক নয়; যদিও মন্দের আধিক্য তোমাকে চমৎকৃত করে। সুতরাং হে বোধশক্তিসম্পন্নেরা ! আল্লাহ্‌কে ভয় কর - যাহাতে তোমরা সফলকাম হইতে পার।’

সূরা আল মায়েদা

৫-১০১ : হে মু’মিনগণ! তোমরা সেই সব বিষয়ে প্রশ্ন করিও না যাহা তোমাদের নিকট প্রকাশ হইলে তাহা তোমাদেরকে কষ্ট দিবে। কুরআন নাযিলের সময় তোমরা যদি সেই সব বিষয়ে প্রশ্ন কর তবে উহা তোমাদের নিকট প্রকাশ করা হইবে। আল্লাহ্ সেই সব ক্ষমা করিয়াছেন এবং আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, সহনশীল।

সূরা আল মায়েদা

৫-১০২ : তোমাদের পূর্বেও তো এক সম্প্রদায় এই প্রকার প্রশ্ন করিয়াছিল; অতঃপর তাহারা উহা প্রত্যাখ্যান করে।

সূরা আল মায়েদা

৫-১০৩ : বাহীরাঃ, সাইবাঃ, ওয়াসীলাঃ ও হাম আল্লাহ্ স্থির করেন নাই; কিন্তু কাফিরগণ আল্লাহ্‌র প্রতি মিথ্যা আরোপ করে এবং তাহাদের অধিকাংশই উপলব্ধি করে না।

সূরা আল মায়েদা

৫-১০৪ : যখন তাহাদেরকে বলা হয়, ‘আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহার দিকে ও রাসূলের দিকে আস’, তাহারা বলে, ‘আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যাহাতে পাইয়াছি তাহাই আমাদের জন্য যথেষ্ট।’ যদিও তাহাদের পূর্বপুরুষগণ কিছুই জানিত না এবং সৎপথপ্রাপ্তও ছিল না, তবুও কি?

সূরা আল মায়েদা

৫-১০৫ : হে মু’মিনগণ! তোমাদের দায়িত্ব তোমাদেরই উপর। তোমরা যদি সৎপথে পরিচালিত হও তবে যে পথভ্রষ্ট হইয়াছে সে তোমাদের কোন ক্ষতি করিতে পারিবে না। আল্লাহ্‌র দিকেই তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন; অতঃপর তোমরা যাহা করিতে তিনি সে সম্বন্ধে তোমাদেরকে অবহিত করিবেন।

সূরা আল মায়েদা

৫-১০৬ : হে মু’মিনগণ! তোমাদের কাহারও যখন মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন ওসিয়াত করার সময় তোমাদের মধ্য হইতে দুইজন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী রাখিবে; তোমরা সফরে থাকিলে এবং তোমাদের মৃত্যুর বিপদ উপস্থিত হইলে তোমাদের ছাড়া অন্য লোকদের মধ্য হইতে দুইজন সাক্ষী মনোনীত করিবে। তোমাদের সন্দেহ হইলে সালাতের পর তাহাদেরকে অপেক্ষমাণ রাখিবে। অতঃপর তাহারা আল্লাহ্‌র নামে শপথ করিয়া বলিবে, ‘আমরা উহার বিনিময়ে কোন মূল্য গ্রহণ করিব না - যদি সে আত্মীয়ও হয় এবং আমরা আল্লাহ্‌র সাক্ষ্য গোপন করিব না; করিলে অবশ্যই পাপীদের অন্তর্ভুক্ত হইব।’

সূরা আল মায়েদা

৫-১০৭ : যদি ইহা প্রকাশ পায় যে, তাহারা দুইজন অপরাধে লিপ্ত হইয়াছে তবে যাহাদের স্বার্থহানি ঘটিয়াছে তাহাদের মধ্য হইতে নিকটতম দুইজন তাহাদের স্থলবর্তী হইবে এবং আল্লাহ্‌র নামে শপথ করিয়া বলিবে, ‘আমাদের সাক্ষ্য অবশ্যই তাহাদের সাক্ষ্য হইতে অধিকতর সত্য এবং আমরা সীমালংঘন করি নাই - করিলে অবশ্যই আমরা জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হইব।’

সূরা আল মায়েদা

৫-১০৮ : এই পদ্ধতিতেই অধিকতর সম্ভাবনা আছে লোকের যথাযথ সাক্ষ্যদানের অথবা শপথের পর আবার তাহাদেরকে শপথ করান হইবে - এই ভয়ের। আল্লাহ্‌কে ভয় কর এবং শ্রবণ কর, আল্লাহ্ ফাসিক সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।

সূরা আল মায়েদা

৫-১০৯ : স্মরণ কর, যে দিন আল্লাহ্ রাসূলগণকে একত্র করিবেন এবং জিজ্ঞাসা করিবেন, ‘তোমরা কী উত্তর পাইয়াছিলে?’ তাহারা বলিবে, ‘এই বিষয়ে আমাদের কোন জ্ঞানই নাই; তুমিই তো অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত।’

সূরা আল মায়েদা

৫-১১০ : স্মরণ কর, আল্লাহ্ বলিবেন, ‘হে মার্‌ইয়াম - তনয় ‘ঈসা! তোমার প্রতি ও তোমার জননীর প্রতি আমার অনুগ্রহ স্মরণ কর, পবিত্র আত্মা দ্বারা আমি তোমাকে শক্তিশালী করিয়াছিলাম এবং তুমি দোলনায় থাকা অবস্থায় ও পরিণত বয়সে মানুষের সঙ্গে কথা বলিতে; তোমাকে কিতাব, হিক্‌মত, তাওরাত ও ইন্‌জীল শিক্ষা দিয়াছিলাম; তুমি কর্দম দ্বারা আমার অনুমতিক্রমে পাখিসদৃশ আকৃতি গঠন করিতে এবং উহাতে ফুৎকার দিতে; ফলে আমার অনুমতিক্রমে উহা পাখি হইয়া যাইত; জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ ব্যাধিগ্রস্তকে তুমি আমার অনুমতিক্রমে নিরাময় করিতে এবং আমার অনুমতিক্রমে তুমি মৃতকে জীবিত করিতে; আমি তোমা হইতে বনী ইস্‌রাঈলকে নিবৃত্ত রাখিয়াছিলাম ; তুমি যখন তাহাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আনিয়াছিলে তখন তাহাদের মধ্যে যাহারা কুফরী করিয়াছিল তাহারা বলিতেছিল, ‘ইহা তো স্পষ্ট জাদু।’

সূরা আল মায়েদা

৫-১১১ : আরও স্মরণ কর, আমি যখন ‘হাওয়ারীদেরকে এই আদেশ দিয়াছিলাম যে, ‘তোমরা আমার প্রতি ও আমার রাসূলের প্রতি ঈমান আন’, তাহারা বলিয়াছিল, ‘আমরা ঈমান আনিলাম এবং তুমি সাক্ষী থাক যে, আমরা তো মুসলিম।’

সূরা আল মায়েদা

৫-১১২ : স্মরণ কর, হাওয়ারীগণ বলিয়াছিল, ‘হে মার্‌ইয়াম - তনয় ‘ঈসা ! তোমার প্রতিপালক কি আমাদের জন্য আসমান হইতে খাদ্য - পরিপূর্ণ খাঞ্চা প্রেরণ করিতে সক্ষম ?’ সে বলিয়াছিল, ‘আল্লাহ্‌কে ভয় কর, যদি তোমরা মু’মিন হও।’

সূরা আল মায়েদা

৫-১১৩ : তাহারা বলিয়াছিল, ‘আমরা চাই যে, উহা হইতে কিছু খাইব ও আমাদের চিত্ত প্রশান্তি লাভ করিবে। আর আমরা জানিতে চাই যে, তুমি আমাদেরকে সত্য বলিয়াছ এবং আমরা উহার সাক্ষী থাকিতে চাই।’

সূরা আল মায়েদা

৫-১১৪ : মার্‌ইয়াম - তনয় ‘ঈসা বলিল, ‘হে আল্লাহ্ আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য আসমান হইতে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা প্রেরণ কর; ইহা আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য হইবে আনন্দোৎসবস্বরূপ এবং তোমার নিকট হইতে নিদর্শন। আর আমাদেরকে জীবিকা দান কর; তুমিই তো শ্রেষ্ঠ জীবিকাদাতা।’

সূরা আল মায়েদা

৫-১১৫ : আল্লাহ্ বলিলেন, ‘আমিই তোমাদের নিকট উহা প্রেরণ করিব; কিন্তু ইহার পর তোমাদের মধ্যে কেহ কুফরী করিলে তাহাকে এমন শাস্তি দিব, যে শাস্তি বিশ্বজগতের অপর কাহাকেও দিব না।’

সূরা আল মায়েদা

৫-১১৬ : আল্লাহ্ যখন বলিবেন, ‘হে মার্‌ইয়াম - তনয় ‘ঈসা! তুমি কি লোকদেরকে বলিয়াছিলে, তোমরা আল্লাহ্ ব্যতীত আমাকে ও আমার জননীকে দুই ইলাহরূপে গ্রহণ কর ?’ সে বলিবে, ‘তুমিই মহিমান্বিত! যাহা বলার অধিকার আমার নাই তাহা বলা আমার পক্ষে শোভন নয়। যদি আমি তাহা বলিতাম তবে তুমি তো তাহা জানিতে। আমার অন্তরের কথা তো তুমি অবগত আছ, কিন্তু তোমার অন্তরের কথা আমি অবগত নই ; তুমি অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত।’

সূরা আল মায়েদা

৫-১১৭ : তুমি আমাকে যে আদেশ করিয়াছ তাহা ব্যতীত তাহাদেরকে আমি কিছুই বলি নাই, তাহা এই : ‘তোমরা আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্‌র ‘ইবাদত কর এবং যত দিন আমি তাহাদের মধ্যে ছিলাম তত দিন আমি ছিলাম তাহাদের কার্যকলাপের সাক্ষী; কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলিয়া লইলে তখন তুমিই তো ছিলে তাহাদের কার্যকলাপের তত্ত্বাবধায়ক এবং তুমিই সর্ববিষয়ে সাক্ষী।’

সূরা আল মায়েদা

৫-১১৮ : ‘তুমি যদি তাহাদেরকে শাস্তি দাও তবে তাহারা তো তোমারই বান্দা, আর যদি তাহাদেরকে ক্ষমা কর তবে তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’

সূরা আল মায়েদা

৫-১১৯ : আল্লাহ্ বলিবেন, ‘এই সেই দিন যেদিন সত্যবাদিগণ তাহাদের সত্যতার জন্য উপকৃত হইবে, তাহাদের জন্য আছে জান্নাত যাহার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। তাহারা সেখানে চিরস্থায়ী হইবে; আল্লাহ্ তাহাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তাহারাও তাঁহার প্রতি সন্তুষ্ট; ইহাই মহাসফলতা।’

সূরা আল মায়েদা

৫-১২০ : আসমান ও যমীন এবং উহাদের মধ্যে যাহা কিছু আছে তাহার সার্বভৌমত্ব আল্লাহ্‌রই এবং তিনি সর্ববিষয়ে শক্তিমান।